Blog

উপজেলা চেয়ারম্যান শামীম আহমেদের চোরাকারবারির গোমড় ফাস: সেল্টারদাতা এমপি ইমরান আহমেদ

কারবারি আন্ডারওয়ার্ল্ডে তারা ডন হিসেবে পরিচিত। কেউ কেউ বলেন গডফাদার। তাদের হাতেই কোম্পানি গন্জের চোরা কারবারের সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ। বলছিলাম সংসদ সদস্য ইমরান আহমেদের মদদে চোরা কারবারি সাম্রাজ্য গড়ে তোলার কারিগর কোম্পানি গন্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শামীম আহমেদের কথা।

এক দশক আগেও অত্র এলাকায় ভারতীয় অবৈধ পণ্যের এমন সর্বগ্রাসী অবস্থা লক্ষ্য করা যায়নি। বিগত উপজেলা   নির্বাচনের পরে পাল্টে যায় সিলেট জেলার অধীনে কোম্পানি গন্জ, গোলাপগঞ্জ , ফেঞ্চুগঞ্জ ,বিয়ানিবাজারসহ আশপাশের এলাকা।

আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকে ভারতীয় অবৈধ পণ্যেে ক্রয়-বিক্রয়। সরেজমিন অনুসন্ধান করে চোরাকারবারি দের সংশ্লিষ্টতার ভয়ংকর সব তথ্য উঠে আসে।

বিভিন্ন সরকারদলীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের নাম মানুষের আলোচনায় মুখে মুখে। বিভিন্ন সময় দুই-একজন চোরাকারবারি ধরা পড়লেও আইনের ফাঁক- ফোকর দিয়ে বের হয়ে যান। মূল হোতারা থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে। অতি সম্প্রতি সুনামগন্জ সদর থানার আশেপাশে অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার’সহ মাজহার(৩৮) এবং করিম (২০) নামে দুইজন ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত ব্যবসায়ীরা অবৈধ পণ্য পাচার ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। কিন্তু মামলা দায়ের করার পূর্বেই প্রভাব খাটিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান শামীম আহমেদ থানা থেকে তাদের ছাড়িয়ে নিয়ে যান এই ঘটনার পর আমাদের সন্দেহের তীর তার উপর স্থির হয় এবং আমরা খুঁজতে থাকি গডফাদারদের। ১ মাসের অধিক সময় অনুসন্ধান করে আমরা অধিকতর নিশ্চিত হয়ে প্রতিবেদন লিখি।

এই প্রতিবেদনের তথ্য সংগ্রহ করতে যেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাতবিরাতে ছদ্মবেশে আমি বিভিন্ন চোরা কারবারি দের আড্ডায় ঘুরে বেরিয়েছি। কাদের মাধ্যমে অত্র এলাকায় ভারতীয় অবৈধ পণ্যের প্রসার ঘটছে তা জানার জন্য আমরা কৌশলে বন্ধুত্ব স্থাপনের মাধ্যমে চোরাকারিদের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখি ।

সে জানায় সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের নেতা শামীম আহমেদ ঘনিষ্ঠজন বাবুলের এর কাছ থেকে চোরাকারবারি দের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। সেই সূত্র ধরে বাবুলের সাথে যোগাযোগ করলে সে আমাদের সাথে কথা বলতে রাজি হয়নি। আমি পরিচয় গোপন রাখার শর্তে কথা বলতে চাইলে সে জানায়, জেলা ও উপজেলায় আবাসিক হোটেলগুলোতে প্রতিরাতে চলে ভারতীয় অবৈধ পণ্যের আসর।

কিশোররা প্রথমত কৌতূহলবশত চোরাকারবারিদের সাথে জড়িত হয় যা পরবর্তীতে নেশায় পরিণত হয়। সাধারণত গরীব পরিবারের সন্তানরা ইয়াবা সেবন করে থাকে, যখন টাকা যোগাড় করতে না পারে তখন টাকা জোগাড়ের জন্য ভারতীয় অবৈধ পণ্য আমদানীর সাথে জড়িয়ে পড়ে।

ট্রাকচালক ও লঞ্চ চালকদের সাথে কথা বলে জানতে পারি শহর থেকে পণ্য পরিবহন করার সময় প্রভাবশালী কিছু লোক তাদেরকে বাধ্য করে অবৈধ পণ্য পরিবহন করার জন্য। তারা পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত করে বলেন উপজেলা চেয়ারম্যান শামীম আহমেদ ঘনিষ্ঠজনেরা এগুলির ব্যবস্থাপনা করে থাকে।
তারা হুমকি দিয়ে বলে যদি এসব না করে তাহলে মিথ্যা মাদকের মামলায় ফাঁসিয়ে দেবে।

সমাজের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি অতি মুনাফার লোভে চোরাকারবারি ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন। অন্ধকার জগতে অস্ত্রের পরেই লাভজনক ব্যবসা হচ্ছে চোরাকারবারি।

আমরা তদন্তের একপর্যায়ে কথা বলি সিলেট সিটি কলেজের অধ্যক্ষের সাথে। তিনি বলেন, আমরা অনেকদিন যাবত প্রত্যক্ষ করছি চোরাকারবারিদের অবস্থা। তিনি জানান অনেক গণ্যমান ব্যক্তিবর্গ এর সাথে জড়িত। তিনি অভিভাবকগণকে আরো সচেতন হওয়ার। পরামর্শ দেন এবং প্রশাসন আরো তৎপর হওয়া প্রয়োজন। সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভারতীয় অবৈধ পণ্য বাজারজাত করণের বিরুদ্ধে কাজ করার তাগিদ দেন।

ভৌগোলিকভাবে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলের কারণে আমাদের সিলেটে নানাভাবে নানাপথে বানের জলের মতো ভারতীয় পণ্য প্রবেশ করছে। যার সিংহভাগ আবার ছড়িয়ে পড়ছে উপজেলার বিভিন্ন আস্তানায়। প্রশাসনিক দুর্বলতা, আইনের সঠিক প্রয়োগের অভাব, চোরাকারবারীদের সাথে প্রশাসনের সখ্যতা, স্থানীয় ও জাতীয় জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা কারণে ভারতীয় অবৈধ পণ্যের ভয়াবহতা আজ কল্পনাতীত। ভৌগলিক অবস্থানের দিক বিবেচনায় তুলনামূলকভাবে নেই অত্র এলাকায় তেমন প্রশাসনিক তদারকি। অত্যন্ত লাভজনক এই ব্যবসাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বিশাল একটি চক্র। শক্তিশালী এই চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত কঠিন।

কারণ আমাদের সমাজে সর্বস্তরে দুর্নীতির শাখ-প্রশাখা বিস্তৃত। ফলে যেকোনো অপরাধী চোরা কারবারিরা আড়ালে থেকে যায় নিজস্ব কৌশলে। আইন ও প্রশাসন এদের প্রভাবের কাছে নতজানু। পুলিশ বলছে, ‘বিদ্যমান আইনে চোরাকারবারিদের ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কারণ হাতেনাতে পণ্য উদ্ধার ছাড়া আমরা কাউকে গ্রেফতার করতে পারি না’।

কথা বলি চোরাকারবারি বিরোধী সামাজিক সংগঠন ‘একতা ‘ সিলেট শাখার আহ্বায়ক তওহিদ রহমানের সাথে কথা বলে তার কাছ থেকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাই। তিনি উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তার দিকে ইঙ্গিত করে তারাই চোরাকারবারিদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে।

এমন এক চলমান সময় আমাদের কাছে খবর আসে,কোম্পানি গন্জের সদরের হোটেল হিল বার্ডে বিভিন্ন প্রকার ভারতীয় অবৈধ পণ্যের চালান এসে পৌছেছে। সেই সূত্র ধরে অতি গোপনীয়তার সাথে আমরা আমাদের সোর্স আবাসিক হোটেলের ভিতরে পাঠিয়ে স্থিরচিত্র সংগ্রহ করে নিশ্চিত হই এখান থেকে অবৈধ পণ্যের সরবরাহ করা হচ্ছে।

এখানে উল্লেখ্য যে, এসবের সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত সংসদ সদস্য ইমরান আহমেদ উপজেলা চেয়ারম্যান শামীম আহমেদ। দীর্ঘদিন ধরে তারা এই সিন্ডিকেট চালিয়ে যাচ্ছেন। যেসকল গোডাউনে অবৈধ পণ্য রাখা হয় সেগুলোতে রয়েছে নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মী। উপজেলার প্রতিটি মানুষের কাছে এই বিষয়ে অজানা নয় কিন্তু যেহেতু মালিকপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় এ বিষয়ে কেউ কথা বলতে নারাজ।

Share on facebook
Facebook
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on twitter
Twitter

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed By : F.A. Creative Firm Ltd.