Blog

জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে শিক্ষক সমাজের ছয় দফা ঘোষণা

ধর্মের নামে উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ উসকে দেয়—এমন কার্যকলাপকে প্রশ্রয় না দেওয়াসহ জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস প্রতিরোধে দেশের শিক্ষকসমাজের পক্ষ থেকে ছয় দফা ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

গতকাল বুধবার রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে জঙ্গিবাদবিরোধী জাতীয় শিক্ষা কনভেনশন থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। কনভেনশনে অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান জঙ্গিবাদ দমনে যাঁর যাঁর অবস্থান থেকে ভূমিকা পালন করতে শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ২৩টি শিক্ষক সংগঠন যৌথভাবে এই কনভেনশনের আয়োজন করে।

কনভেনশনের ঘোষণা উপস্থাপন করেন কনভেনশন উদ্‌যাপন কমিটির সদস্যসচিব ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব এ এস এম মাকসুদ কামাল। ছয় দফা ঘোষণায় রয়েছে—প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজ উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনা ধারণ, লালন, অনুশীলন ও চর্চা অব্যাহত রেখে এ-বিষয়ক কর্মকাণ্ড আরও জোরদার করবে; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কোনো রকম উগ্র ধর্মীয় মতবাদ লালন ও প্রচার থেকে বিরত থাকবে। ধর্মের নামে উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ উসকে দেওয়ার মতো কোনো কর্মকাণ্ড প্রশ্রয় দেবে না; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত সমাবেশ (অ্যাসেমব্লি), খেলাধুলা, বিতর্কচর্চা, সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মপ্রক্রিয়া, স্কাউট, গার্ল গাইডসহ সহপাঠ্যক্রম কর্মসূচি জোরদার ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবে; সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি-বিষয়ক একটি বাধ্যতামূলক কোর্স চালু করতে হবে।

পঞ্চম ঘোষণায় শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, ‘শিক্ষার্থীদের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করুন। পঠনপাঠনে অধিক যত্নশীল হোন। শিক্ষার্থীদের মানবীয় বোধে উজ্জীবিত করুন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করুন।’ ষষ্ঠ ঘোষণায় সন্তানদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া, সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পিতামাতা ও অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। ঘোষণার সঙ্গে ২৩টি শিক্ষক সংগঠন একমত পোষণ করে।

কনভেনশনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেকোনো মূল্যে জঙ্গিবাদ রুখে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, শান্তির ধর্ম ইসলামকে বিকৃত করে যারা এসব কাজ করছে, যারা দেশকে জঙ্গি বানাতে চাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। সর্বাত্মক চেষ্টা নিতে হবে, না হয় সমূলে উৎপাটন করা যাবে না। যারা জঙ্গিবাদে গিয়েছিল, তাদের অনেকে ফিরে আসছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মনে হয় সঠিক বার্তা সবাইকে দিতে পেরেছেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যাঁর যাঁর প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে হবে, তবেই কাজে লাগবে। শিক্ষকদের সতর্ক হতে হবে। তিনি বলেন, ৩ সেপ্টেম্বর সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জঙ্গিবাদবিরোধী কর্মসূচি পালন করা হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী বলেন, এখন সবাইকে নড়েচড়ে বসতে হবে। জঙ্গিবাদের মাস্টারমাইন্ড শুধু ‘ভাইয়ারা’ নয়, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাও আছে। তবে সমাজ এদের বাঁচতে দেবে না।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, সন্ত্রাসকে মোকাবিলা করতে অস্ত্রের যে ভূমিকা, তার চেয়ে বেশি ভূমিকা শিক্ষকসমাজের।

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করতেই হবে মন্তব্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, এ জন্য চিহ্নিত করতে হবে, সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে।

কনভেনশন উদ্‌যাপন কমিটির আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে কনভেনশনে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষকনেতারা বক্তব্য দেন।

Share on facebook
Facebook
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on twitter
Twitter

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed By : F.A. Creative Firm Ltd.