কিছু বক্তা ইসলামের নামে বিভিন্ন মাহফিল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানি ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দিচ্ছেন। ফেসবুক ও ইউটিউবে তাঁদের সেই বক্তব্য রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে। এসব বক্তব্য শুনে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। কয়েকজনের বক্তব্য শুনে কথিত জিহাদের নামে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে তরুণরা।
অনেকে নিজেদের বিবেচনায় ইসলামের শত্রু শনাক্ত করে হামলা চালাতে গিয়ে গ্রেপ্তারও হয়েছে। পাল্লাপাল্টি বক্তব্যে ছড়িয়ে পড়ছে বিদ্বেষ। লাখ লাখ অনুসারী থাকার সুবাদে নিজেদের প্রয়োজনে অনুদানের নামে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন কিছু বক্তা। আবার কেউ কেউ নিজের ব্যবসার প্রচারেও কথিত ইসলামী বক্তাদের ব্যবহার করছে।
তবে স্পর্শকাতর বিষয় হওয়ায় এ রকম বিতর্কিত জনপ্রিয় বক্তাদের আইনের আওতায় আনতে পারছে না আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। জঙ্গি হামলা বা নাশকতার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলেই শুধু গ্রেপ্তার করা হচ্ছে উসকানিদাতাদের। ফেসবুক ও ইউটিউব থেকে তাঁদের বিভ্রান্তিকর ও উসকানিমূলক ভিডিও সরানো যাচ্ছে না। ২০১৯ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৫ জন বক্তার তালিকা করলেও উসকানিমূলক বক্তব্য নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়নি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ।
সত্যিকার আলেম ও ইসলামী বক্তারা বলছেন, কিছু ব্যক্তির উদ্দেশ্যমূলক বক্তব্যে আলেমদের ওপর মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে। তাই যাঁরা বিতর্কিত বক্তব্য দিচ্ছেন তাঁদের সচেতন হওয়ার পাশাপাশি নজরদারির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা।
সম্প্রতি হামলার পরিকল্পনার অভিযোগে চার বক্তাসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে বক্তব্যে উগ্রপন্থা ছড়ানোর প্রমাণ পেয়েছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। বেশ কয়েকজনকে রাখা হয়েছে নজরদারিতে। এহসান গ্রুপ নামের প্রতিষ্ঠান খুলে ইসলামী বক্তাদের দিয়ে ওয়াজের নামে প্রচারণা চালিয়ে লক্ষাধিক গ্রাহকের ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন মুফতি মাওলানা রাগীব আহসান ও তাঁর সহযোগীরা।
শেষের পাতা
প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০
ধর্মের নামে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন কিছু বক্তা
► ফেসবুক, ইউটিউবে এখনো অসংখ্য উসকানিমূলক ভিডিও, বক্তব্য ► ফেসবুক, ইউটিউবে কিছু বক্তার কথা শুনে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা ► তালিকা করেই কাজ শেষ, নজরদারিতেও পড়েছে ভাটা ► ভিডিও সরিয়ে নিয়ন্ত্রণ ও সচেতনতার তাগিদ আলেমসমাজের
এস এম আজাদ
ধর্মের নামে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন কিছু বক্তা
কিছু বক্তা ইসলামের নামে বিভিন্ন মাহফিল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানি ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দিচ্ছেন। ফেসবুক ও ইউটিউবে তাঁদের সেই বক্তব্য রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে। এসব বক্তব্য শুনে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। কয়েকজনের বক্তব্য শুনে কথিত জিহাদের নামে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে তরুণরা।
অনেকে নিজেদের বিবেচনায় ইসলামের শত্রু শনাক্ত করে হামলা চালাতে গিয়ে গ্রেপ্তারও হয়েছে। পাল্লাপাল্টি বক্তব্যে ছড়িয়ে পড়ছে বিদ্বেষ। লাখ লাখ অনুসারী থাকার সুবাদে নিজেদের প্রয়োজনে অনুদানের নামে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন কিছু বক্তা। আবার কেউ কেউ নিজের ব্যবসার প্রচারেও কথিত ইসলামী বক্তাদের ব্যবহার করছে।
তবে স্পর্শকাতর বিষয় হওয়ায় এ রকম বিতর্কিত জনপ্রিয় বক্তাদের আইনের আওতায় আনতে পারছে না আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। জঙ্গি হামলা বা নাশকতার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলেই শুধু গ্রেপ্তার করা হচ্ছে উসকানিদাতাদের। ফেসবুক ও ইউটিউব থেকে তাঁদের বিভ্রান্তিকর ও উসকানিমূলক ভিডিও সরানো যাচ্ছে না। ২০১৯ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৫ জন বক্তার তালিকা করলেও উসকানিমূলক বক্তব্য নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়নি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ।
সত্যিকার আলেম ও ইসলামী বক্তারা বলছেন, কিছু ব্যক্তির উদ্দেশ্যমূলক বক্তব্যে আলেমদের ওপর মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে। তাই যাঁরা বিতর্কিত বক্তব্য দিচ্ছেন তাঁদের সচেতন হওয়ার পাশাপাশি নজরদারির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা।
সম্প্রতি হামলার পরিকল্পনার অভিযোগে চার বক্তাসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে বক্তব্যে উগ্রপন্থা ছড়ানোর প্রমাণ পেয়েছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। বেশ কয়েকজনকে রাখা হয়েছে নজরদারিতে। এহসান গ্রুপ নামের প্রতিষ্ঠান খুলে ইসলামী বক্তাদের দিয়ে ওয়াজের নামে প্রচারণা চালিয়ে লক্ষাধিক গ্রাহকের ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন মুফতি মাওলানা রাগীব আহসান ও তাঁর সহযোগীরা।
গত বৃহস্পতিবার র্যাবের হাতে তিনি গ্রেপ্তার হলে বেশ কিছু ওয়াজ এখন আলোচনায়। এর একটি ওয়াজে কুয়াকাটার পীর মাওলানা হাফিজুর রহমান ছিদ্দিককে বলতে শোনা যায়, ‘এহসান গ্রুপ গোটা জাতির জন্য রহমত। এহসান গ্রুপকে যারা বিশ্বাস করবে না, তারা মুনাফেক।’
গত ৫ মে তলোয়ার নিয়ে হামলা চালানোর আগে আল সাকিব নামের এক যুবককে সংসদ ভবন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শেরেবাংলানগর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাকিব ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মোবাইল ফোনে আলী হাসান উসামা, মাহমুদুল হাসান গুনবী, আমির হামজা, হারুন ইজহারসহ কয়েকজনের কথিত জিহাদি হামলার ভিডিও দেখে উগ্রপন্থী হন। এই বক্তাদের কিছু ভিডিও লিংকের উদ্ধৃতি দেন সাকিব, যেখানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ওপর হামলার কথা বলা হয়েছে। সাকিব ব্যক্তিগতভাবে উসামা গুনবীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা ক্বিতাল সন্ত্রাসী হামলার কথা বলেন। এতে উদ্বুদ্ধ হয়ে সাকিব ফেসবুকে গ্রুপ তৈরি করে হামলার ঘোষণা দেন। তদন্তের সূত্র ধরে উসামাকে রাজবাড়ী থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরবর্তী সময়ে তিনি ঢাকার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। ২৪ মে কুষ্টিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আমির হামজাকে। তিনিও গত ৩১ মে ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এতে তিনি বলেছেন, ইউটিউবে তাঁর বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ প্রচার করা হয়। এর ফলে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছে। এতে ‘মুসলিম টিভি’, ‘ইসলামের খুঁটি’, ‘ওয়াজ মিডিয়া’, ‘তাহজীব সেন্টার রাজশাহী’, ‘মেগা টিভি’ নামের ইউটিউব চ্যানেল জড়িত বলে দাবি করেন আমির হামজা।
শেষের পাতা
প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০
ধর্মের নামে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন কিছু বক্তা
► ফেসবুক, ইউটিউবে এখনো অসংখ্য উসকানিমূলক ভিডিও, বক্তব্য ► ফেসবুক, ইউটিউবে কিছু বক্তার কথা শুনে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা ► তালিকা করেই কাজ শেষ, নজরদারিতেও পড়েছে ভাটা ► ভিডিও সরিয়ে নিয়ন্ত্রণ ও সচেতনতার তাগিদ আলেমসমাজের
এস এম আজাদ
ধর্মের নামে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন কিছু বক্তা
কিছু বক্তা ইসলামের নামে বিভিন্ন মাহফিল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানি ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দিচ্ছেন। ফেসবুক ও ইউটিউবে তাঁদের সেই বক্তব্য রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে। এসব বক্তব্য শুনে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। কয়েকজনের বক্তব্য শুনে কথিত জিহাদের নামে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে তরুণরা।
অনেকে নিজেদের বিবেচনায় ইসলামের শত্রু শনাক্ত করে হামলা চালাতে গিয়ে গ্রেপ্তারও হয়েছে। পাল্লাপাল্টি বক্তব্যে ছড়িয়ে পড়ছে বিদ্বেষ। লাখ লাখ অনুসারী থাকার সুবাদে নিজেদের প্রয়োজনে অনুদানের নামে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন কিছু বক্তা। আবার কেউ কেউ নিজের ব্যবসার প্রচারেও কথিত ইসলামী বক্তাদের ব্যবহার করছে।
তবে স্পর্শকাতর বিষয় হওয়ায় এ রকম বিতর্কিত জনপ্রিয় বক্তাদের আইনের আওতায় আনতে পারছে না আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। জঙ্গি হামলা বা নাশকতার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলেই শুধু গ্রেপ্তার করা হচ্ছে উসকানিদাতাদের। ফেসবুক ও ইউটিউব থেকে তাঁদের বিভ্রান্তিকর ও উসকানিমূলক ভিডিও সরানো যাচ্ছে না। ২০১৯ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৫ জন বক্তার তালিকা করলেও উসকানিমূলক বক্তব্য নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়নি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ।
সত্যিকার আলেম ও ইসলামী বক্তারা বলছেন, কিছু ব্যক্তির উদ্দেশ্যমূলক বক্তব্যে আলেমদের ওপর মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে। তাই যাঁরা বিতর্কিত বক্তব্য দিচ্ছেন তাঁদের সচেতন হওয়ার পাশাপাশি নজরদারির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা।
সম্প্রতি হামলার পরিকল্পনার অভিযোগে চার বক্তাসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে বক্তব্যে উগ্রপন্থা ছড়ানোর প্রমাণ পেয়েছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। বেশ কয়েকজনকে রাখা হয়েছে নজরদারিতে। এহসান গ্রুপ নামের প্রতিষ্ঠান খুলে ইসলামী বক্তাদের দিয়ে ওয়াজের নামে প্রচারণা চালিয়ে লক্ষাধিক গ্রাহকের ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন মুফতি মাওলানা রাগীব আহসান ও তাঁর সহযোগীরা।
গত বৃহস্পতিবার র্যাবের হাতে তিনি গ্রেপ্তার হলে বেশ কিছু ওয়াজ এখন আলোচনায়। এর একটি ওয়াজে কুয়াকাটার পীর মাওলানা হাফিজুর রহমান ছিদ্দিককে বলতে শোনা যায়, ‘এহসান গ্রুপ গোটা জাতির জন্য রহমত। এহসান গ্রুপকে যারা বিশ্বাস করবে না, তারা মুনাফেক।’
গত ৫ মে তলোয়ার নিয়ে হামলা চালানোর আগে আল সাকিব নামের এক যুবককে সংসদ ভবন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শেরেবাংলানগর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাকিব ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মোবাইল ফোনে আলী হাসান উসামা, মাহমুদুল হাসান গুনবী, আমির হামজা, হারুন ইজহারসহ কয়েকজনের কথিত জিহাদি হামলার ভিডিও দেখে উগ্রপন্থী হন। এই বক্তাদের কিছু ভিডিও লিংকের উদ্ধৃতি দেন সাকিব, যেখানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ওপর হামলার কথা বলা হয়েছে। সাকিব ব্যক্তিগতভাবে উসামা গুনবীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা ক্বিতাল সন্ত্রাসী হামলার কথা বলেন। এতে উদ্বুদ্ধ হয়ে সাকিব ফেসবুকে গ্রুপ তৈরি করে হামলার ঘোষণা দেন। তদন্তের সূত্র ধরে উসামাকে রাজবাড়ী থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরবর্তী সময়ে তিনি ঢাকার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। ২৪ মে কুষ্টিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আমির হামজাকে। তিনিও গত ৩১ মে ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এতে তিনি বলেছেন, ইউটিউবে তাঁর বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ প্রচার করা হয়। এর ফলে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছে। এতে ‘মুসলিম টিভি’, ‘ইসলামের খুঁটি’, ‘ওয়াজ মিডিয়া’, ‘তাহজীব সেন্টার রাজশাহী’, ‘মেগা টিভি’ নামের ইউটিউব চ্যানেল জড়িত বলে দাবি করেন আমির হামজা।
গত ১৫ জুলাই রাজধানীর মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে মুফতি মাহমুদুল হাসান গুনবীকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। দুই মামলায় আদালতে স্বীকারোক্তি দেন গুনবী। ২৪ জুলাই এক মামলার জবানিতে তিনি স্বীকার করেন, মানুষকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে জঙ্গিবাদে মটিভেট করতেন। তিনি দাওয়াতুল ইসলাম নামের একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। জবানবন্দিতে গুনবী বলেছেন, ‘আমার বক্তব্যে যুবসমাজ উগ্র হতে পারে।’ অনুষ্ঠানে ‘পরিস্থিতির আলোকে না বুঝেই উসকানিমূলক বক্তব্য’ দিয়েছেন বলে জবানবন্দিতে দাবি করেন গুনবী।
গত ২৩ মে চট্টগ্রাম থেকে আবদুল্লাহ ও আনোয়ার হোসেন নামের দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। হারুন ইজহারের বয়ানে উদ্বুদ্ধ হয়ে উগ্রবাদে জড়ানো আব্দুল্লাহ প্রযুক্তিতে দক্ষ। তাঁদেরও ঢাকায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একসময় ছাত্রশিবির করা আবদুল্লাহ আদালতে জবানবন্দি দিয়ে উগ্রপন্থী বক্তাদের ওপর দায় চাপিয়েছেন। সম্প্রতি হেফাজতের মামলায় র্যাবের অভিযানে চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার ইজহারকেও গ্রেপ্তার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিটিটিসি।
সিটিটিসি কর্মকর্তারা বলছেন, উসামা, আমির, গুনবীর বক্তব্য কয়েকটি ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক আইডি-গ্রুপে ছড়িয়ে পড়েছে। অথচ জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাঁরা সাকিবকে পাগল বলে আখ্যায়িত করেন। তবে সাকিব দাবি করেন, তাঁদের বয়ান শুনেই সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসে সংসদ ভবনে হামলার পরিকল্পনা করেন। একইভাবে ইসলামী বক্তার অনুমোদনে ২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল বুয়েটের ছাত্র আরিফ রাফহান দীপকে কুপিয়ে হত্যা করেন তাঁরই সহপাঠী। ২০১৮ সালের ৩ মার্চ সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলা করেন ফয়জুর নামের এক যুবক। সরাসরি হামলা ছাড়াও উসকানিমূলক বক্তব্য ধর্মভীরু সাধারণ মানুষকে উগ্রপন্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, করোনার কারণে ওয়াজ মাহফিল বন্ধ থাকায় আগের ধারণ করা ওয়াজ এবং অনেকের ভিডিও ও বক্তব্য ফেসবুক ও ইউটিউবে বেশ ছড়িয়ে পড়ছে। কিছু বক্তব্য থেকে বিদ্বেষ ও উসকানি ছড়িয়ে পড়ছে। ‘উম্মাহ নেটওয়ার্ক’ নামের একটি গ্রুপ রয়েছে, যারা সরাসরি জঙ্গিবাদে উসকানি দিয়ে যাচ্ছে। ‘তামীম আল আদনানী’ নামের এক ব্যক্তি বিদেশে বসে ভিডিও বার্তায় জঙ্গিবাদে উসকানি দিচ্ছেন। এক মুফতি করোনার সূত্র আবিষ্কারের দাবি করেছেন। বগুড়ার একজনের বক্তব্য নিয়েও চলছে সমালোচনা। একজন ডাক্তার দিচ্ছেন ভুল ব্যাখ্যা। চট্টগ্রামের হারুন ইজহারের বক্তব্য শুনে নাশকতার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। কিন্তু এসব ভিডিও সরানোর কোনো উদ্যোগ নেই।
২০১৯ সালের মার্চে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক অধিশাখা-২ থেকে ১৫ জন ইসলামী বক্তার একটি তালিকা তৈরি করে প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ‘এই বক্তারা সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মবিদ্বেষ, নারীবিদ্বেষ, জঙ্গিবাদ, গণতন্ত্রবিরোধী ও দেশীয় সংস্কৃতিবিরোধী বয়ান দেন বলে লক্ষ করা যাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা র্যাডিক্যালাইজড হয়ে উগ্রবাদের দিকে ধাবিত হচ্ছে।’ নজরদারির কিছু সুপারিশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও সব বিভাগীয় কমিশনারের কাছে চিঠি আকারে পাঠানো হয়। তালিকায় আমির হামজা, গুনবী ছাড়াও হেফাজতের নেতা মাওলানা মামুনুল হক ও মুফতি ইলিয়াছুর রহমান জিহাদী নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। আরো নাম আছে আবদুর রাজ্জাক বিন ইউসূফ (সালাফি), মুফতি ফয়জুল করিম, মুজাফফর বিন মুহসিন, মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন, মতিউর রহমান মাদানী, মাওলানা সিফাত হাসান, দেওয়ানবাগী পীর (পরে মারা গেছেন), মাওলানা আরিফ বিল্লাহ, হাফেজ মাওলানা ফয়সাল আহমদ হেলাল, মোহাম্মদ রাক্বিব ইবনে সিরাজ। এই তালিকার বাইরেও রয়েছেন বিদ্বেষ ছড়ানো কয়েকজন বক্তা।