টানাপোড়েনে যে ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাতে এ ধরনের সংগঠনের বিস্তার হওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে, শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে মধ্যমপন্থী ধর্মীয় দলগুলোর দূরত্ব আরও বাড়ছে, যা সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। জামায়াতে ইসলামীর ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হচ্ছে একধরনের অস্থিরতা। অন্যদিকে, দেশে সুশাসনের অভাব, সীমাহীন দুর্নীতি, সিংহভাগ তরুণের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ সরকার-সমর্থিত সহযোগী সংগঠন, বিশেষ করে ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘাত, টেন্ডারবাজি, দুর্নীতি ইত্যাদি যে ধরনের সামাজিক অস্থিরতার সৃষ্টি করেছে, তার সুযোগ যে উগ্রাবাদী সংগঠনগুলো নিয়ে থাকে, এর একাধিক উদাহরণ রয়েছে। এসবের পরিপ্রেক্ষিতেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রয়োগে মতাদর্শভিত্তিক চরম উগ্রপন্থীকে নির্মূল অথবা নিষ্ক্রিয় করা সম্ভব নয়। এমনটা হলে গত ২০ বছরের ওপর বিশ্বের পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র যে বল প্রয়োগ করছে, তার মাধ্যমে আল-কায়েদা, আল-নুসরা অথবা হালের আইএসকে নিশ্চিহ্ন করতে পারত। প্রয়োজন হতো না আফগান তালেবানদের সঙ্গে আলোচনার। প্রয়োজন হতো না সিরিয়ার আসাদকে এখনো জিইয়ে রাখার।
বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে মতাদর্শভিত্তিক সন্ত্রাস নির্মূল অথবা স্থায়ীভাবে দমন সম্ভব নয়। এমনটা হলে জেএমবির এ ধরনের পুনরুত্থানের অথবা সংগঠিত হওয়ার প্রয়াস দেখা যেত না। বাংলাদেশের সমাজকে এ ধরনের হুমকি থেকে নিরাপদ রাখতে হলে বহুমুখী তৎপরতার প্রয়োজন হবে। প্রয়োজন রয়েছে একটি জাতীয় ঐকমত্য গঠনের এবং জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে এই কালো থাবাকে প্রতিহত করা। তেমনটি করতে না পারলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা চরম হুমকির সম্মুখীন হবে।