গত ৩ কিংবা ৪ দশকে প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ, আর বিপরীতে দাখিল মাদ্রাসা সংখ্যা বেড়েছে ৮ গুণ। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী বেড়েছে দ্বিগুণ আর দাখিল মাদ্রাসায় বেড়েছে ১৩ গুণ, তারমানে শিক্ষা ক্ষেত্রেও প্রচন্ডভাবে সাম্প্রদায়িকীকরণ হয়েছে তা সত্য। দেশের জাতীয় পর্যায়ে সাম্প্রদায়িকতার ভিত শক্ত হওয়ার পেছনে এযাবতকালে অর্থনীতিও একটা বড় সহায়ক ভূমিকা পালন করে আসছে। তারমধ্যে মৌলবাদীদের আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ঔষধ শিল্প ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান; মসজিদ, মাদ্রাসা, ব্যবসায়িক/বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান; খুচরা ও পাইকারী ব্যবসা, স্থানীয় সরকার, বেসরকারি সংস্থা, ট্রাস্ট, ফাউন্ডেশন, যোগাযোগ পরিবহন খাত, কৃষক-শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সমিতি, বাংলাভাই প্রকৃতি প্রকল্প, রিয়েল স্টেট, সংবাদ মাধ্যম ও তথ্য প্রযুক্তি ইত্যাদি অর্থনীতি শক্তির মোডেল হিসেবে সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে পাকাপোক্ত করেছে বলে অনেক প্রগতিশীল লেখকের প্রবন্ধে উঠে এসেছে।
শেকড়ের ইতিহাস না জানলে, পুঁজিবাদী অর্থনীতিকে না বুঝলে সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ এর বহুমাত্রিক কারণগুলো কখনই জানা যাবে না। তাইপৃথিবীর দেশে দেশে সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ উত্থানের পেছনে পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ পর্যায় সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হাত রয়েছে। সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদকে রাষ্ট্রের বা দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে, এবং রাষ্ট্র নিজেই তা লালন করে চলেছে। রাষ্ট্রের তথা সরকার দলের জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ববৃন্দের আস্কারা পেয়ে সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদের শেখড় আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে গেঁড়ে বসেছে। পরিশেষেসাম্প্রতিক সময়ে কুমিল্লায় পূজা মণ্ডপে কুরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে সারা দেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা, মন্দির, প্রতিমা ভাঙচুর ও খুনের ঘটনা সংগঠিত হয়েছে, যা সমগ্র বিশ্বের মানবতাবাদী ব্যক্তি, সংগঠন ও রাষ্ট্রের জাতীয় বিবেককে প্রচন্ডভাবে নাড়া দিয়েছে। অতীতের সমস্ত উগ্র সাম্প্রদায়িকতাবাদ, মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের রেকর্ড ছাড়িয়ে এবারের শারদীয় দুর্গা পূজা উৎসবে মেজরিটি মুসলমান ধর্মান্ধতার ধারক-বাহক সাম্প্রদায়িক অপশক্তিই দেশের মধ্যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। তাই সরকারকে এবং আপামর দেশবাসীকে এখনিই মানবতা বিরোধী উগ্র সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রতিরোধ করতে হবে, না হলে সাম্প্রদায়িক ও জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত আমাদের এই দেশটি ইসলামিক মৌলবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হবে, যা কারোর জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে না। পাশের দেশ ইসলামিক রাষ্ট্র পাকিস্তান ও তালেবানী রাষ্ট্র আফগানিস্তান তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।